কুসুম থলে সংক্রমণ

চলুন প্রথমে একটা সূত্র দেখি - “ একটি মুরগির ব্যাচে মোট মৃত্যুর হার তার প্রথম সপ্তাহের মৃত্যুহারের সমানুপাতিক”।

ধরা যাক ৪০ দিনের একটি ব্যাচে ১০০০ মুরগি আছে, যদি প্রথম সপ্তাহে মৃত্যুর হার ১০টি হয় তাহলে ৪০ দিনের মাথায় মৃত মুরগির সংখ্যা দাঁড়াবে ৬০ টি আর যদি প্রথম সপ্তাহে পাঁচটি হয় তাহলে ৪০ দিনের মাথায় মৃত মুরগির সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০ টি। তাই প্রথম সপ্তাহটি পোল্ট্রি ফার্মিং এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যার দ্বারা বাকি সময়টুকু পারফরমেন্স নির্ধারণ করা যায়। একটি আদর্শ খামারে এই মৃত্যুর হার প্রথম সপ্তাহে ১% নিচে ধরা হয়। তাছাড়া যদি প্রথম সপ্তাহে সঠিকভাবে ব্রুডিং সম্ভব না হলে পরবর্তীতে মুরগিগুলো ছোট বড় তারতম্য দেখা দেয়, যা পোল্ট্রি ব্যবসায় খারাপ প্রভাব ফেলে। তবে যদি কোন খামারে সঠিক ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখে তাহলে প্রথম সপ্তাহে অতিরিক্ত ৫ গ্রাম ওজন আনা সম্ভব যা ৩৫ তম দিনে অতিরিক্ত ৩৫ গ্রাম ওজন পাবে তবে এখানে উল্লেখ্য যে এই অতিরিক্ত ৩৫ গ্রামের জন্য কোন অতিরিক্ত ফিড দিতে হয় না, তা শুধু সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্যই অর্জন হয়।

এখন এই প্রথম সপ্তাহে মুরগির বাচ্চার মৃত্যুর হারের পিছনে কুসুম থলি সংক্রমণ বা Yolk Sac infection বেশি দায়ী, যদি এই সংক্রমণকে প্রতিরোধ করা যায় তাহলে পুরো ব্যাচের পারফরম্যান্স ভালো হবে ধরা নেওয়া যায়।

কুসুম থলে সংক্রমণ (Yolk Sac infection) এর সাথে কুসুমের(Yolk) সম্পর্ক

ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো যতগুলো স্তর আছে তার মধ্যে ১৯তম দিনে দেখা যায় কুসুম,বাচ্চার দেহের ভেতর প্রবেশ করে। যে পথে কুসুমটি দেহের ভেতর প্রবেশ করে তাকে নাভি (Navel) বলা হয়। এখন প্রশ্ন হল এ কুসুম এভাবে নাভী পথে দেহে প্রবেশ করার কারণ কি? মূলত ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর পরই বাচ্চার দেহে শক্তির প্রয়োজন হয় যেন মা মুরগির পিছু পিছু দৌড়াতে পারে যা প্রকৃতির একটি নিয়ম। এখন এই শক্তি কুসুম থাকে গ্রহণ করে, আর এই কুসুমে যে খাদ্য প্রাণ থাকে তা দিয়ে মুরগির বাচ্চা অনায়াসে ৪৮ ঘন্টা কোন খাদ্য বা পানি গ্রহণ না করে বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু এই কুসুম আবার দেহে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

At 19th days the yolk inside the boby by nevel path
At 19th days the yolk inside the boby by nevel path
ইনফেকশন হওয়ার পদ্ধতি

নাভির কন্ডিশন

কুসুম থলের সংক্রামণ (Yolk Sac infection) অনেক ভাবে হতে পারে তবে বেশির ভাগ সময় দেখা যায় হ্যাচারিতে যে ডিমগুলো হ্যাচীং এর জন্য দেওয়া হয় তা যদি সঠিক ভাবে পরিষ্কার না করে বা মল লেগে থাকা অবস্থায় হ্যাচ করা হয় তখন বাচ্চা গুলো ডিম থাকে বের হবার সময় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত হয়। তারপর এই বাচ্চাগুলো যখন খামারির কাছে পৌঁছায় তার কয়েকদিন পর থেকে মৃত্যুর হার শুরু হয়। এক্ষেত্রে খামারীদের কিছু করার থাকে না তাই বিশ্বস্ত ও ভালো হ্যাচারি থেকে এ গ্রেড বাচ্চা সংগ্রহ করা উচিত। এছাড়া অনেক সময় ভালো মানের বাচ্চা আনার পরেও ইনফেকশন দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, যদি খামারি আদর্শ ব্রুডিং ব্যবস্থা না করে, লিটার দূষিত হওয়ার কারণে এবং অতিরিক্ত আদ্রতার জন্য ব্যাকটেরিয়া গুলো নাভির থেকে দেহে প্রবেশ করে।

ধকল

মুরগির বাচ্চাগুলো যখন হ্যাচারি থেকে খামারে পৌঁছায় তখন পরিবহনজনিত কারণে এদের মধ্যে ধকল অনুভব করে। যদি সঠিক ভাবে বাচ্চা গুলো খামারে স্থানান্তর না করা হয় তাহলে ধকল জনিত কারণে বাচ্চার মৃত্যু হয়। অনেক সময় তাড়াহুরো করে বক্স থেকে ব্রুডারে ফেলা হয়, তখন আঘাত জনিত কারণে নাভির পর্দা ফেটে যায় ফলে সংক্রামণ হয়। তাই বাচ্চা গুলো ব্রুডারে ছাড়ার আগে ব্রুডারের আলো কমিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে এবং ধীরে ধীরে তাপ বাড়াতে হবে।

পানিশূন্যতা

হ্যাচারি থেকে বাচ্চাগুলো খামার পর্যন্ত পরিবহন সময়ে কোন প্রকার পানি দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই বাচ্চাগুলোর মধ্যে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। তাই খামারে বাচ্চা আসার পরপরই সাদা পানি প্রথমে দিতে হবে তবে এতে ইলেকট্রোলাইট গ্লুকোজ দিলে ভালো হয়। অনেক সময় পানিতে খামারীরা গুড় মিশিয়ে থাকে, যদিও গুড় শক্তি উৎস হিসেবে ভালো কাজ করে কিন্তু অধিক পরিমাণ উল্টো কুসুমে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

প্রতিরোধ

কুসুম থলের সংক্রামণ (Yolk Sac infection) প্রতিরোধ করতে হলে কিছু পন্থা অবলম্বন করতে হবে।

  • প্রথমেই আপনাকে বিশ্বস্ত ও ভালো হ্যাচারি থেকে এ গ্রেড বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। অনেক সমায় আমরা বাচ্চার দাম বেশি হওয়া বি গ্রেড বাচ্চা কিনি কিন্তু আমরা যাই করি না কেন দিনশেষে এ গ্রেড এর তুলনায় বি গ্রেড এর মৃত্যুহার বেশি হবে।

  • সঠিকভাবে ব্রুডার স্থাপন করতে হবে, মূলত একটি আদর্শ ব্রুডারে যা যা প্রয়োজন তা সবকিছুর ব্যবস্থা করতে হবে।

  • বাচ্চা আসার পূর্বে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ব্রুডারে নিয়ে আসতে হবে।

  • ব্রুডারে বাচ্চা ছাড়ার পূর্বে মৃদু আলো থাকতে হবে, বেশি আলোতে বাচ্চার ধকলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

  • ব্রুডারে মেঝেতে পেপার বিছাতে হবে এবং ৫ থেকে ৭ দিন রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন পানি পড়ে ভিজে না যায়, ভিজে গেলে পরিবর্তন করতে হবে। ৩ দিন পর পর পেপার পরিবর্তন করতে হবে।

  • ব্রুডারে ভালো ভাবে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

  • বাচ্চা আসার পর পানি দিতে হবে এবং পানিতে মিশাতে হবে -

Stress-Kill WS powder - 1 gm/5 liter drinking water for 5 days

Enflox-Vet - 1 gm/5 liter drinking water for 5 days

যদিও antibiotic কে না বলা উচিত তবেও আমাদের দেশের আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় হালকা মাত্রায় antibiotic দিলে বাচ্চার Early Mortality কমে আসে ।