রানীক্ষেত

NewCastle Disease এর ইতিহাস বলতে গেলে আমাদের ১৮৯৮ সালে নর্থ স্কটল্যান্ড এর দিকে যেতে হবে যখন একজন মুরগি ব্যবসায়ী এক রাতে তার দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যায় কিন্তু পরদিন দোকান খোলার পর দেখে সব মুরগি ম্ররে পড়ে আছে, তখন কারো কাছে এর উত্তর ছিল না। তারপর ১৯২৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার শহর জাভাতে রহস্যজনকভাবে মুরগি মারা যেতে থাকে। তখন জাভাতে প্রচুর মরগি,Influenza রোগে মারা যাচ্ছিল যার জন্য এ রহস্যজনক মৃত্যুতে Influenza কে দায়ি করা হয়। কিন্তু ১৯২৭ সালে ইংল্যান্ডের ছোট শহর New Castle একইভাবে প্রচুর মুরগির মৃত্যু হলে Dr T.M.Doyle প্রমাণ করে এটা কোন Influenza রোগ নয় বরং নতুন ভাইরাস এবং ঐ শহরের নাম অনুয়ায়ী এর নামকরণ করা হয় New castle disease । ১৯৫০ সালে এ ভাইরাস ইন্ডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে এরং আমাদের উপমহাদেশে নামকরণ করা হয় রানীক্ষেত। এখন পর্যন্ত পোল্ট্রি ইতিহাসে যতগুলো রোগ শনাক্ত করা হয়েছে এর মধ্যে (New Castle or Ranikhet) সবচেয়ে মারাত্মক ও ভয়ঙ্কর ধরা হয় কারণ এর মৃত্যুর হার ১০০% তবে কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এর মৃত্যুর হার ৩০% কমানো সম্ভব।

ভাইরাস পরিচিতি

Group : Group V ((-)ssRNA

Order : Mononegavirales

Family : Paramyxoviridae

Species : Newcastle disease virus (NDV)

এই ভাইরাস বাতাস এর মাধ্যমে এক স্থান হতে অন্য স্থান এ ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে যে তাপমাত্রা থাকে, এ তাপমাত্রায় ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে কিন্তু যখনই এ তাপমাত্রা নেমে আসে তখনই ভাইরাসটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ভাইরাসটি Zoonotic Disease সৃষ্টি করে অর্থাৎ গৃহপালিত পশু পাখি থেকে এই ভাইরাস মানব দেহে প্রবেশ করে। তবে ভাইরাসটি মানবদেহে তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না, কখনো কখনো চোখ লাল হয়ে হালকা পানি ঝরতে পারে।

"Microscopic view illustration of the Newcastle disease virus, depicted as a spherical entity with s
"Microscopic view illustration of the Newcastle disease virus, depicted as a spherical entity with s

তীব্রতা

এ ভাইরাসটির ক্ষতির তীব্রতার উপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

Lentogenic : এক্ষেত্রে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না তবে বাচ্চা মুরগির ক্ষেত্রে হালকা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

Mesogenic : এক্ষেত্রে এর তীব্রতা মধ্যম পর্যায়ে থাকে। এই ফর্মটি মূলত এশিয়া অঞ্চলে বেশি হয়ে থাকে বলে একে এশিয়াটিক ফর্ম বলা হয়। এ এক্ষেত্রে মুরগির শ্বাসকষ্ট সহ অন্যান্য লক্ষণ বিশেষ করে নার্ভ সিস্টেম ব্যাঘাত(Torticollis)ঘটায়। এক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ২০% হতে পারে যদি ভালোভাবে টিকা করণ করা হয়

Velogenic : এক্ষেত্রে তীব্রতার মাত্রা চরম পর্যায়ে থাকে এবং মৃত্যুর হার ৯০% ও অসুস্থতার হাত ১০০% হবে।

সংক্রমণ

এই ভাইরাসটি বিভিন্নভাবে সংক্রামিত করতে পারে তবে মূলত দুইভাবে সংক্রমণ ক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

সরাসরি সংক্রমণ :

এক্ষেত্রে যখন কোন অসুস্থ মুরগি সুস্থ মুরগি সংস্পর্শে আসে তখন অসুস্থ সংস্পর্শের কারণে কারণে সুস্থ মুরগিটি সংক্রামিত হবে। কারণ অসুস্থ মুরগি নাক দিয়ে ঝিল্লি পড়ে এবং ডায়রিয়া হয় যা সুস্থ মুরগির শ্বাস-প্রশ্বাস মাধ্যমে ভাইরাসটি প্রবেশ করতে পারে।

পরোক্ষ সংক্রমণ :

  • দূষিত লিটার ও জীবাণুমুক্ত ছাড়া যন্ত্রপাতির মাধ্যমে।

  • ভালো কোম্পানির ফিড না দিয়ে বাজারের খোলা ফিডের মাধ্যমে জীবাণুটি শেডে আসতে পারে।

  • পর্যাপ্ত বায়ো সিকিউরিটি ব্যবস্থা না থাকার কারণে খামারে কর্মচারী ও দর্শনার্থীর জামা ও জুতার মাধ্যমে আসতে পারে।

প্রতিরোধ

যেহেতু এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই তাই প্রতিরোধই এর একমাত্র চিকিৎসা। প্রতিরোধ সম্পর্কে জানার আগে আমাদের একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আমাদের পোল্টি ব্যবসা মূল লস এর কারনই হচ্ছে এই রোগ বালাই আর এই রোগ বালাই কারণে আমরা প্রচুর পরিমাণ অর্থ ঔষধের পিছনে ব্যয় করি যার ফলে একদিকে যেমন খামারের খরচ বেড়ে যায় অন্যদিকে অতিরিক্ত মাত্রা এন্টিবায়োটি খাওয়ানোর কারণে মুরগির কাঙ্খিত ওজন আসে না। তাই একটি খামারে সফলতার পেছনে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গুলোই এর সফলতার পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হয়। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক রানীক্ষেত রোগের জন্য কি কি প্রতিরোধক মূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

  • প্রথমেই খামারে বায়ো সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হবে। একটি ভালো বায়ো সিকিউরিটি সমৃদ্ধ খামারে শতকরা ৮০% রোগ কম হয়। কিন্তু আমাদের দেশে প্রায় বেশিরভাগ খামারি সঠিক নিয়মে বায়ো সিকিউরিটি মেনে চলেনা।

  • বাজার থেকে কিংবা অন্য কোন খামার থেকে নতুন মুরগি আনার পরে তার সাথে সাথে খামারে অবস্থিত অন্যান্য মুরগির সাথে রাখা যাবে না। নতুন মুরগিকে কিছুদিনের জন্য আলাদা রাখা উচিত, এতে করে নতুন মুরগি যদি কোন রোগ থেকে থাকে তা খামারে অবস্থিত মুরগিগুলোকে আক্রান্ত করতে পারবে না।

  • খামারে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ও আদ্রতা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

  • দর্শনার্থীকে যতটা সম্ভব কম প্রবেশ করানো উচিত। আর যদি প্রবেশ করতেই হয় তবে দর্শনার্থীর পোশাক ও জুতো জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।

  • বিভিন্ন বয়সের মুরগি এক শেডে না পালন করাই ভালো।

  • নিয়মিত লিটার পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্তকরণ করতে হবে।

  • মুরগিকে বাজারের খোলা ফিড না দিয়ে ভালো উন্নত মানের ফিড দিতে হবে।

 how to prevent Newcastle disease in a chicken farm
 how to prevent Newcastle disease in a chicken farm

চলুন কিছু কমন লক্ষণ দেখে নেই -

স্বর পরিবর্তন

নাক দিয়ে ঝিল্লি পড়া

ঘাড় বাঁকা

শ্বাস কষ্ট

প্রতিকার

যদিও NewCastle Disease বা রানীক্ষেত ভাইরাসের কোন চিকিৎসা নেই প্রতিরোধেই এর মূল চিকিৎসা তবুও কিছু পন্থা অবলম্বন করলে আক্রান্ত মুরগিগুলোর মৃত্যুর হার কমানো যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

চিকিৎসার প্রথমেই আক্রান্ত মুরগিগুলোকে ICU ট্রান্সফার করতে হবে। যেহেতু এই ভাইরাসটি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় তাই প্রথমে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধির জন্য প্রথম ৩ দিন যে ওষুধগুলো একসাথে মিলিয়ে দিতে হবে তা হলো

Ace-Vet - 1 g/2-3 L drinking water

Levosol vet- 1 ml per 1-2L of drinking water

Nephrocare vet - 1 ml/L

Immolyte liquid - 1 ml/L

এখনে ঊল্লেখ্য যে, প্রথম ৫ দিন মৃত্যুর হার বেশি থাকবে তারপর ধীরে ধীরে মৃত্যুর হার কমে আসবে যতক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যুর হার না কমবে, ততক্ষণ কোন এন্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না। যখন মৃত্যুর হার কমে আসবে তখন ICU থাকা মুরগিগুলোর মধ্যে প্রথমে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে যদি ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়, তাহলে সমস্ত মুরগির মধ্যে প্রয়োগ করাই শ্রেয়।