কক্সিডিওসিস

কক্সিডিওসিস বিভিন্ন দেশের পোল্ট্রি শিল্পে গভীর প্রভাব রেখে চলেছে। এই রোগের প্রাদুর্ভাব উচ্চ আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রার পরিবেশে বেশি ঘটে, যা বিশেষ করে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর দেশগুলিতে পোল্ট্রি খামারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। এটি উৎপাদনের হ্রাস, মৃত্যুহারের বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক লোকসান ঘটায়, যা সরাসরি পোল্ট্রি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং সরবরাহের ঘাটতির দিকে নিয়ে যায়। বিভিন্ন দেশের খামারিরা এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে গিয়ে বাড়তি ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধ কৌশলের দিকে ঝুঁকছেন, যা পোল্ট্রি শিল্পের অপারেশনাল খরচ বৃদ্ধি করে।

রোগ পরিচিতি

কক্সিডিওসিস একটি পরজীবী রোগ যা মূলত মুরগি এবং অন্যান্য পোল্ট্রি পাখিদের মধ্যে দেখা যায়। এর জীবাণু, ইমেরিয়া প্রজাতির প্রোটোজোয়া, পাখির অন্ত্রে প্রবেশ করে এবং তার কোষের ভেতর বিভাজন ও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, যা অন্ত্রের ক্ষতি এবং রক্তপাত ঘটায়।

কক্সিডিওসিস জীবাণুর জীবনচক্র মূলত কয়েকটি ধাপে বিভক্ত। প্রথমে, সংক্রমিত মলের মাধ্যমে জীবাণুর ডিম পরিবেশে ছড়ায়। এই ডিমগুলো যখন পাখি মলমিশ্রিত জল বা খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করে, তখন ডিমগুলো পাখির অন্ত্রে প্রবেশ করে এবং স্পোরোজোয়াইটসে (sporozoites) পরিণত হয়। এরপর, স্পোরোজোয়াইটস (sporozoites) অন্ত্রের কোষে ঢুকে ট্রফোজোয়াইট (trophozoites) আকারে বিভাজন শুরু করে। বিভাজনের পর্ব শেষে, এই ট্রফোজোয়াইট(trophozoites)গুলো গ্যামেটোসাইট(gametocytes) হয় এবং অবশেষে নতুন ডিম এ পরিণত হয়, যা পাখির মলের মাধ্যমে আবার পরিবেশে ছড়ায়।

Coccidiosis germs
Coccidiosis germs

রোগ সংক্রমণের উপায়

কক্সিডিওসিস রোগের প্রধান সংক্রমণের পথ হলো সংক্রমিত মলমিশ্রিত জল বা খাবারের মাধ্যমে। সংক্রমিত পাখির মল থেকে রোগজীবাণুর ডিম (ওওসিস্ট) পরিবেশে ছড়ায়, যা অন্য পাখি খেলে বা পান করলে তার অন্ত্রে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণ ঘটায়। এ ছাড়া ধূলা-বালি, শেডে কর্মরত কর্মচারী পোশাক হতে, খাদ্যের বস্তা হতে, সাপ্লাইকৃত পানি মাধ্যমে ছড়ায়। মূলত এই জীবাণু প্রকৃতিতে নিষ্কৃয় অবস্থায় থাকে, যখনই ২১ থেকে ৩২ ডিক্রি তপমাত্রা, ৫৫% আদ্রতা ও অক্সিজেন পায় তখনই সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর এই অনুকূল অবস্থা খামারে বিদ্যমান থাকে।

Trnasmission way of coccidiosis diease
Trnasmission way of coccidiosis diease
chick affected by coccidiosis
chick affected by coccidiosis

প্রতিরোধ

  • খামারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দিকে নজর দিন।

  • নিয়মিত লিটার পরিবর্তন করুন।

  • লিটার আদ্রতা বেশি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থান নিন। আরো জানার জন্য মুরগী লিটার ব্যবস্থাপনা পেইজটিতে যান।

  • উন্নতমানের খাদ্য ও পানিয় সরবরাহ ব্যবস্থা করুন। আরো জানার জন্য পোল্ট্রি ফিডমুরগি পালনে পানির ব্যবস্থাপনা পেইজটিতে যান।

  • মুরগি সংখ্যার উপর ভিত্তি করে, মুরগিকে পর্যাপ্ত জায়গায় ব্যবস্থা করতে হবে। অল্প জায়গায় বেশি মুরগি গাদাগাদি করে পালন করা যাবে না।

  • আক্রান্ত মুরগির সংখ্যা যদি কম হয়, তাহলে আক্রান্ত মুরগিগুলোকে আলাদা করে ICU ব্যবস্থা করতে হবে।

  • কমার্শিয়াল পোল্ট্রি ফিডে "কক্সিডিওস্ট্যাটস" মিশ্রিত আছে কিনা নিশ্চিত হন, যদি ঘরোয়া খাদ্য প্রদান করেন তাহলে ফিডের সাথে "কক্সিডিওস্ট্যাটস"মিশ্রিত করুন।

  • আপনার খামারে নিয়মিত পশু চিকিৎসক ভিজিট করাতে হবে।

লক্ষণ গুলো নির্বাচিত করে আপনার খামারে কক্সিডিওসিস রোগ হয়ছে কিনা জেনে নিন