গাম্বোরো
গাম্বোরো একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা ইনফেক্টিয়াস বার্সেল ডিজিজ বা আইবিডি নামেও পরিচিত।এই ভাইরাস জনিত রোগ ছোট বড় প্রায় সব খামারি দেখা দেয়। এ রোগের বিস্তার পৃথিবীর সকল দেশে দেখা যায়। এ রোগের তেমন কোন চিকিৎসা নেই বিধায় এর মৃত্যুর হার ব্যাপক (২১১০ টি কেইসের মধ্যে ২২%)। এ রোগ ১৯৬২ সালে আমেরিকার ডেলাওয়্যারের গাম্বোরোতে প্রথম শনাক্ত হয় ফলে এ অঞ্চলের নাম অনুযায়ী এ রোগের নামকরণ করা হয়। এমন খুব কম খামারি আছে, যার খামারের অভিজ্ঞতায় গাম্বোরো সম্মুখীন হয় নাই। আপনি কি জানেন গাম্বোরো কোন ঋতুতে বেশী দেখা দেয় ?
রোগ পরিচিতি
বিরনাভিরিডি (Birnaviridae) পরিবারে অন্তর্গত বিরনা ভাইরাস সেরোটাইপ ১ এ রোগের জন্য দায়ী। এই ভাইরাসের ২ টা স্ট্রেইন রয়েছে যেমন – ক্ল্যাসিকাল(Classical) ও ভ্যারিয়্যান্ট(Variant)। এ রোগ ২ - ৬ সপ্তাহের মুরগির বাচ্চায় বেশী আক্রান্তু হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ৮ থেকে ৬০ দিন বয়সের মধ্যে ২১-৩৫ দিন বাচ্চা মুরগি বেশী আক্রান্ত হয়েছে। এ জীবাণুটি মুরগি দেহে প্রবেশ করে প্রধানত বার্সা অঙ্গে আক্রমণ করে , মূলত বার্সা অঙ্গটি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে দেখা যায় জীবাণুটি যখন অঙ্গটিকে আক্রমণ করে তখন মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে অন্যান্য রোগ বিশেষ করে কক্সি বা এনডি সংক্রমণ হয়, তাই বলা যায় গাম্বোরো, কক্সি ও এনডি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, গাম্বোরো হলে সেকেন্ডারি ইনফেকশন হিসেবে কক্সি না হয় এনডিতে মুরগি আক্রান্ত হবে। কখনও কখনও ই কোলাই, সিআরডি লক্ষণও পরিলক্ষিত হয়। জীবাণুটি দেহে প্রবেশ করার ৩ থেকে ৪ দিন পরে রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় এবং পরবর্তী ৩ দিনের মধ্যে মুরগি মারা যায় তবে যে মুরগিগুলো এই সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে অর্থাৎ পরবর্তী পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে এই জীবাণুটির এন্টিবডি মুরগির দেহে সৃষ্টি হয়।
সংক্রমণ
একেই ঘরে অসুস্থ বাচ্চার সংস্পর্শে সুস্থ বাচ্চা আসলে।
বাতাসের মাধ্যমে।
দূষিত লিটার ও জীবাণুমুক্ত ছাড়া যন্ত্রপাতির মাধ্যমে।
ভালো কোম্পানির ফিড না দিয়ে বাজারের খোলা ফিডের মাধ্যমে জীবাণুটি শেডে আসতে পারে।
পর্যাপ্ত বায়ো সিকিউরিটি ব্যবস্থা না থাকার কারণে খামারে কর্মচারী ও দর্শনার্থীর জামা ও জুতার মাধ্যমে আসতে পারে।
প্রতিরোধ
যেহেতু এ রোগের কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই তাই এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গুলোই একটি খামারকে বড় লস হতে বাঁচাতে পারে।প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে-
খামারে বায়ো সিকিউরিটি ব্যবস্থা করতে হবে।
যেহেতু গ্রীষ্মকালে গাম্বোরোর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয় তাই খামারের নিকটতম স্থলে কোন বন্যপ্রাণী মারা গেলে কিংবা খামারে কোন মুরগি মারা গেলে তা অতিসত্বর মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে যেন ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে খামারে প্রবেশ না করে।
নিয়মিত খাদ্য ও পানির পাত্র পরিষ্কার করতে হবে।
নিয়মিত লিটার পরিষ্কার ও পরিবর্তন করতে হবে।
ভালো মানের ফিড সরবরাহ করতে হবে।
অবশ্যই গাম্বোরো টিকা প্রদান করতে হবে।
লক্ষণ
হঠাৎ করে আপনার খামারে মুরগিতে কোন লক্ষণ ছাড়া মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে? জেনে নিন কিভাবে কিন্তু তার আগে এটাও দেখেন যে - আপনার মৃত মুরগিগুলো কি পা পেছনের দিকে রেখে বুকের উপর ভর করে মারা যাচ্ছে? আর তা যদি হয় তবে এটি একটি পরিষ্কার ধারণা করা যায়, আপনার খামারে গাম্বোরো ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ এই ভাইরাসটি মুরগির বার্সাকে আক্রান্ত করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেল ফলে দেহে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া ও টক্সিসিটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়, তখন উচ্চ জ্বরের কারণে হার্ট, লিভার ও কিডনি ফেইল করে মারা যায়।
তবে কিছু পূর্ব লক্ষণ আছে যা থেকে গাম্বোরো আগমন বোঝা যায়। চলুন জেনে নেই -
পূর্ব লক্ষণের প্রথমে দেখা যাবে মুরগিগুলো খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে এবং ঢিলা হয়ে বসে পড়বে। সাদা বা হলদে পাতলা পায়খানা শুরু হবে আর এই বারবার পাতলা পায়খানার জন্য পেছনে মল লেগে থাকবে। প্রচন্ড জ্বর হবে যার জন্য মুরগিগুলো স্ট্রেস অনুভব করবে এবং ছোট ছোট গ্রুপ হয়ে বসে পড়বে। এমত অবস্থায় তিন দিনের মধ্যে ২০ থেকে ৩০% মুরগি মারা যাবে আর যে মুরগিগুলো বেঁচে থাকবে তাদের দেহে৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি হবে ফলে পরবর্তীতে এ মুরগিগুলো অন্যান্য জীবাণু দ্বারা কম আক্রান্ত হবে এবং ভালো ওজন হবে।
এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক পোস্টমর্টেম হতে কিভাবে গাম্বোরো শনাক্ত করবেন -
প্রথমত এ রোগের প্রাথমিক অবস্থায় যে সকল মুরগি মারা যাবে তাদের পোস্টমর্টেম করার পরে দেখা যাবে বার্সা আকারে অনেক ফোলে গেছে এবং কাটলে এর ভিতরে সাদা সাদা মেটিরিয়াল বা রক্ত থাকতে পারে।
যখন ভাইরাসটি তার পরবর্তী স্টেজে চলে যাবে তখন পোস্টমর্টেম করলে দেখা যাবে দেহের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে উরু ও বুকে রক্তের ছাপ থাকবে কারণ এ ভাইরাসটি তখন আস্তে আস্তে দেহের রক্ত প্রবাহ ব্লক করে দিবে এবং সেকেন্ডারি ইনফেকশন যেমন মাইক্রো প্লাসমা,টাইফয়েড ও ইকোলাই রোগের লক্ষণও পোস্টমর্টেম দেখা যাবে।
Bursa condition after postmortem
Muscle condition after postmortem
প্রতিকার
যদিও গাম্বোরো ভাইরাসের কোন চিকিৎসা নেই প্রতিরোধেই এর মূল চিকিৎসা তবুও কিছু পন্থা অবলম্বন করলে আক্রান্ত মুরগিগুলোর মৃত্যুর হার কমানো যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
চিকিৎসার প্রথমেই আক্রান্ত মুরগিগুলোকে ICU ট্রান্সফার করতে হবে। যেহেতু এই ভাইরাসটি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় তাই প্রথমে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধির জন্য প্রথম ২৪ ঘন্টা যে ওষুধগুলো একসাথে মিলিয়ে দিতে হবে তা হলো-
Ace-Vet - 1 g/2-3 L drinking water
Levosol vet- 1 ml per 1-2L of drinking water
Nephrocare vet - 1 ml/L
Immolyte liquid - 1 ml/L
তবে এখানে উল্লেখ্য যে প্রথম তিনদিন মৃত্যুর হার বাড়তে থাকবে তারপর থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর হার কমে যাবে যখন মৃত্যুর হার কমবে তখন সেকেন্ডারি ইনফেকশন অনুযায়ী ওষুধ দিতে হবে যেমন-
যদি Mycoplasmal বা E-coli হয় তাহলে- Tam-vet power (2.5 gm /L for 3 to 5 days)
যদি Salmonella হয় তাহলে- Moxcil vet power (1 gm/ 3-5 L for 5 days)
Contacts
Subscribe to our newsletter
+8801819486145